পলাশবাড়ীতে চাঞ্চল্যকর শাওন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন! প্রেমের কারনেই আপন বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই শাওন
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার চাঞ্চল্যকর সাগর আহম্মেদ শাওন হত্যা কান্ডের মাত্র ৪ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ। এঘটনায় জড়িত নিহতের আপন বড় ভাই তানজির আহম্মেদ (৩০) কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মূলত ছোট ভাই নিহত শাওন আহম্মেদের স্ত্রী রোজিনা বেগমের সাথে বড় ভাই তানজির আহম্মেদের প্রেমের সম্পর্ক অটুট রাখতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি কোমরপুর হাটে একটি ইসলামী জলসা চলাকালে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে খুন হয় উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের কোমরপুর বাজার এলাকার জসিম উদ্দিন সাবু মিয়ার তৃতীয় পুত্র ছাত্রলীগ নেতা সাগর আহম্মেদ শাওন। হত্যার পর নিহত শাওনের লাশ পাশবর্তী একটি বায়ু গ্যাস প্লান্টের ভিতর লুকিয়ে রাখা হয়। পর দিন ৭ জানুয়ারি নিহতের লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পলাশবাড়ী থানা পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পলাশবাড়ী থানার ওসি তদন্ত মতিউর রহমান ও এসআই সঞ্জয় সাহাসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের অপর বড় ভাই বেনজির আহম্মেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে আসামী করে ৭ জানুয়ারি পলাশবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-০৬, তাং ০৭/০১/২০২০, ধারা ৩০২,৩০১,৩৪ দঃবিঃ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পলাশবাড়ী থানার দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসার এসআই সঞ্জয় সাহা। এদিকে হত্যা মামলা দায়ের পর থেকে হত্যা কান্ডের ক্লু উদঘাটন করতে দিন রাত নিরলস প্রচেষ্টা চালায় থানা পুলিশ। অবশেষে শাওন হত্যা কান্ডের ৪ দিনের মাথায় ১১ জানুয়ারী চাঞ্চল্যকর এই হত্যা কান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় নিহতের আপন বড় ভাই তানজির আহম্মেদ কে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত তানজিরের ঘর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি দেশীয় অস্ত্র (দা) উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত তানজির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুলিশকে জানিয়েছে সে দীর্ঘদিন থেকে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রোজিনাকে পছন্দ করে প্রেম নিবেদন করত। প্রথমে রোজিনা তাকে পাত্তা না দিলে ও পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত তাদের মোবাইলে বিভিন্ন কথাবার্তা হতো। যদি ও তা দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়নি। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি ছোট ভাই জানতে পারায় তাকে হত্যা করার একক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে বড় ভাই তানজির।
....... যে ভাবে খুন করা হয় শাওনকে.......
৬ জানুয়ারি ¯’ানীয় কোমরপুর বাজারে একটি বিশাল ইসলামী জলসার আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল ৪টা থেকে জলসার সাউন্ড সিস্টেম মাইকের আওয়াজে গোটা কোমরপুর এলাকা ছিল মুখরিত। সন্ধায় বড় ভাই তানজির তার নিজ ঘর থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র দা নিয়ে ছোট ভাই শাওন কে খুন করার উদ্দেশ্যে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখে! দুই ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি হওয়ায় ছোট ভাই শাওনের উপর নজর রাখে বড় ভাই তানজির। রাত ৯টার দিকে বড় ভাই তানজির তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই রাখা দেশীয় অস্ত্র (দা) কোমরে লুকিয়ে রাখে। পরে গোপন কথা আছে বলে কৌশলে ছোট ভাই শাওনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে নিকটবর্তী একটি চাতালের অন্ধকারে চলে যায়। ছোট ভাইকে সামনে দিয়ে বড় ভাই তানজির পিছনে হাটতে শুর“ করে। এসময় তানজির তার কোমরে থাকা দা দিয়ে আকস্মিক পিছন থেকে ছোট ভাই শাওনের মাথায় স্বজোরে একটি মাত্র আঘাত করে। শাওন ও মা বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। এরপর তানজির শাওনের মাথায় পরপর আরো ৩টি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর শাওনের লাশ রেখে আবারো নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে চলে যায় তানজির। রাত সারে ১০টার দিকে আবারো ঘটনা¯’লে আসে বড় ভাই খুনি তানজির। উদ্দেশ্যে লাশ লুকিয়ে ফেলা। এরপর ছোট ভাই শাওনের লাশ টেনে হেচড়ে একটি বায়ু গ্যাস প্লান্টে রাখা হয়। পরে দোকান থেকে নিয়ে আসা একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ইট ভরে সেই বস্তা লাশের উপর দিয়ে দেয়। রাতে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে শেষ হয় কিলিং মিশন। ঠান্ডা মাথায় ছোট ভাই শাওনকে খুন করে বড় ভাই তানজির প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। যাতে কেউ তাকে সন্দেহ করতে না পারে।
.... যেভাবে গ্রেফতার করা হয় খুনি তানজিরকে ...
মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খুনি তানজিরকে সনাক্ত করে পুলিশ। ১১ জানুয়ারি পুলিশ কৌশলে নিহতের পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগম স্বীকার করে তাকে প্রেম নিবেদনের কথা! পরে তানজির এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের বর্ননা করেন। হত্যার পর নিহতের মোবাইল ফোন বন্ধ করে বড় ভাই তানজির। পরদিন খুব সকালে নিহত শাওনের শশুড়বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে মোবাইলটি খোলা হয় এবং সেই মোবাইল নাম্বারে বিশ টাকা রিচার্জ করা হয়। এরপর সেখান থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী ব্রীজে গিয়ে পানির নিচে তা ফেলে দেওয়া হয়। এর আগে শাওনের মোবাইল থেকে তিনটি ম্যাসেজ পাঠানো হয়। যাতে লেখা আছে আমাকে কেউ খুঁজবে না আমি পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়া”িছ। কিš‘ শাওনের মোবাইলে থেকে সেই ম্যাসেজ কোথাও সেন্ট হয়নি। নিহত শাওনের স্ত্রী সুন্দরী রোজিনা রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউপির মাটিয়ালপাড়া গ্রামের গোফফার মিয়ার কন্যা। সাত বছর পূর্বে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। সাত বছর দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অপরদিকে খুনি তানজির আহম্মেদের স্ত্রী ও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সঞ্জয় সাহা জানান, তদন্ত কাজে তাকে সব সময় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাঈনুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ মাসুদার রহমান মাসুদ, ওসি তদন্ত মতিউর রহমান প্রমুখ। তিনি আরো জানান, এই হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করা হ”েছ। পলাশবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদার রহমান মাসুদ জানান, মামলাটির যথাযথ গুর“ত্ব অনুধাবন করে তদন্ত করার ফলে খুবই স্বল্প সময়ে এই হত্যা কান্ডের ক্লু উদঘাটন ও অপরাধীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো জানান এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হছুে ।